মানসিক চাপ কমাতে যেসব খাবার খাবেন

কখনও কখনও মানসিক চাপ (স্ট্রেস) এড়ানো যায় না, কিন্তু গবেষণা ধারণা দিচ্ছে যে কিছু স্ট্রেস হরমোন বা করটিসোল কমাতে পারে। জটিল কার্বস, প্রোটিন, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি, ম্যাগনেসিয়াম ও সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে মানসিক চাপ কমতে পারে। নিচে এই প্রতিবেদনে মানসিক চাপ কমাতে সেরা কিছু খাবার তুলে ধরা হলো।


তৈলাক্ত মাছ

মাছ-পাগল মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব করুন, কারণ তাদের সাথে থাকলে মাছ খেতে উদ্বুদ্ধ হবেন। মানসিক চাপ কমাতে তৈলাক্ত মাছ খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গবেষণায় পাওয়া গেছে তৈলাক্ত মাছ স্ট্রেস হরমোন অ্যাড্রিনালিন ও করটিসোলের প্রতিক্রিয়া নিবৃত্ত করতে পারে। কানাডার টরন্টোর রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান শাহজাদী দেবজি বলেন, ‘তৈলাক্ত মাছে বিদ্যমান ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রবাহনাশক শক্তি স্ট্রেস হরমোনের ইফেক্ট কমাতে পারে। এটি উদ্বেগ কমায় ও মানসিক চাপ ভালোভাবে মোকাবেলা করে।’

ঢেঁড়স

এই সবুজ সবজিতে বি ভিটামিন ফোলেট রয়েছে। এই বি ভিটামিনটি সুখের হরমোন ডোপামিন উৎপাদন করে। ডা. দেবজি বলেন ‘মস্তিষ্কের ওপর ডোপামিনের প্রভাবে সুখের অনুভূতি উদ্দীপিত হয়।’ ২০১৭ সালে জার্নাল অব সাইকিয়াট্রিক রিসার্চে প্রকাশিত গবেষণা সাজেস্ট করছে বিষণ্ণতার মাত্রা কমাতে পর্যাপ্ত ফোলেট গ্রহণ করা যেতে পারে।

ওটমিল

২০১৬ সালে জার্নাল অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্সে প্রকাশিত রিভিউ গবেষণা অনুসারে একবাটি উষ্ণ ওটমিল শিথিলতা ও প্রশান্তির মাত্রা যোগ করতে পারে। ডা. দেবজি বলেন, ‘জটিল কার্বোহাইড্রেট খেলে সেরোটোনিনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এই কেমিক্যালটি স্ট্রেস হরমোন হ্রাস করে।’ ওটস হচ্ছে ট্রিপ্টেফ্যানেল ভালো উৎস যা শরীরে সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়।

ডার্ক চকোলেট

অনেক মানুষই একমত হবেন যে মানসিক চাপ কমাতে তাদের প্রিয় খাবার হচ্ছে চকোলেট, বিশেষ করে ডার্ক চকলেট। মুখে হাসি ফোটাতে প্রতিদিন একটি ডার্ক চকোলেটিই যথেষ্ট হতে পারে। কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে, ডার্ক চকোলেট খেলে ফিল-গুড ইফেক্ট বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ সুখের অনুভূতি বাড়ে। ডা. দেবজি বলেন, ‘ডার্ক চকোলেটের উপাদান কোকোয়ার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রক্তনালিগুলোকে শিথিল করে, রক্তচাপ কমায় ও রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।’ ২০১৭ সালের একটি গবেষণা মতে প্রতিদিন ২০ গ্রাম ডার্ক চকোলেট খেলে হার্ট ও রক্তনালির স্বাস্থ্যের ওপর উপকারী প্রভাব পড়তে পারে।

আলু

এই কমফোর্ট ফুড খেতে কে না ভালোবাসে? গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক চাপের সময় আলুর মতো স্টার্চ জাতীয় খাবার খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায়। নিউইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত হান্টার কলেজের নিউট্রিশন প্রফেসর মারটিকা হিনার বলেন, ‘আমাদের ক্যালরির প্রয়োজন না হলেও মানসিক চাপের সময় উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি, বিশেষ করে তৈলাক্ত বা শ্বেতসার বা মিষ্টি জাতীয় খাবার।’ এটাকে মানসিক ক্ষুধা বলা যেতে পারে যেখানে আমরা তৃপ্তির জন্য খেয়ে থাকি। প্রচুর ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন-সি ও অন্যান্য পুষ্টি রয়েছে এমন আলু খেতে পারেন। ডা. হিনারের মতে, মানসিক চাপে মিষ্টি আলু ভালো অপশন হতে পারে।

পালংশাক

যখন আমরা মানসিক চাপে থাকি আমাদের মাংসপেশীগুলো টাইট হয়ে পড়ে। আমরা স্পষ্টভাবে ভাবতে পারি না ঘুমাতে সমস্যা হয় ও রক্তচাপ বেড়ে যায়। যে পুষ্টিটি এসব উপসর্গকে প্রশমিত করতে পারে তা হলো ম্যাগনেসিয়াম, কিন্তু মানসিক চাপে থাকলে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কমে যায়। ‘ডায়েট ডায়াগনোসিস: নেভিগেটিং দ্য মেইজ অব হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন পানস’ বইয়ের লেখক ডেভিড নিকো বলেন, ‘পালংশাকের মতো সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে।’

গ্রিন-টি

মানসিক চাপ কমাতে পারে এমন একটি পানীয় হচ্ছে গ্রিন-টি। ডা. নিকো বলেন, ‘গ্রিন-টি এর প্রধান সক্রিয় পুষ্টি হচ্ছে অ্যামাইনো অ্যাসিড এল-থিয়েনিন।’ বায়োকেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল বুলেটিনে প্রকাশিত গবেষণায় পাওয়া গেছে, লো ক্যাফেইন গ্রিন-টি এর এল-থিয়েনিন মস্তিষ্কের ওপর ঘুমাচ্ছন্ন প্রভাব না ফেলেই মনকে শিথিল করতে পারে।

কমলা

কমলা, মোসাম্বি ও অন্যান্য সাইট্রাস ফলে মায়ো-ইনোসিটল (প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন বি ভিটামিনের একটি ফর্ম) পাওয়া যায়। মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য এই পুষ্টির দরকার রয়েছে। গবেষণায় পাওয়া গেছে মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে ও মেজাজ শান্ত করতে মায়ো-ইনোসিটল সাপোর্ট দেয়।

গাজর

নিউট্রিশন নুপটিয়ালসের প্রতিষ্ঠাতা মান্ডি এনরাইট বলেন, ‘মানসিক চাপ কমানোর অন্যতম সেরা খাবার হচ্ছে মচমচে সবজি ও ফল যেমন- গাজর ও আপেল। খাবারের কড়কড়/মচমচ শব্দ মানসিক চাপ কমায় এবং কামড় দিয়ে এসব খাবার খেলে চোয়ালের অনমনীয়তা দূর হয়। চিবিয়ে বা কামড়িয়ে খেতে হয় এমন খাবার ফোকাসকে পুণর্নিদেশিত করতে পারে এবং মানসিক চাপ কমাতে পারে।’

Post a Comment

0 Comments